Wednesday, 4 June 2025

26000 চাকরি বাতিল রায় ঘোষণায় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার রক্ষা পেয়েছে কি?

শুভকল্যাণ বিশ্বাস, দৃষ্টি বাংলা, কোলকাতা - প্রসঙ্গত বলে রাখা যায়,হাইকোট প্রথম যখন 26000 চাকরি বাতিল মামলার রায় দিলো তাতে 17রকম দুর্নীতির কথা তুলে ধরে প্যানেল ক্যানসেল করলো। কিন্তু এই প্যানেল কি ভাবে দুর্নীতি হয়েছে সেটা সকলেই কম বেশী জানেন। যারা চাকরি পেয়েছে ও যারা টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছে এবং যে সরকারের নেতা মন্ত্রীরা যুক্ত তাদের বিচার এখনো শেষ হয়নি শুধু তাই নয় OMR শিট এখনো প্রমাণিত হয়নি কোনটি সঠিক, কোনটি নয় তাহলে কি করে এই বিচার এর রায়  হতে পারে। আইন বিচার করে তথ্যের ভিত্তিতে। যে তথ্য এই বিচারের স্পষ্ট নয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এতগুলো মানুষের পরিবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে না। শুধুমাত্র একপক্ষের বিচার হলো আরেকপক্ষ বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তথ্যের ভিত্তিতে একমাত্র স্পষ্ট হয়েছে রাঙ্ক জাম্প এবং এক্সপায়ার প্যানেল তাদের চাকরি যেতে পারে। OMR স্পষ্টভাবে এখনো প্রমাণিত হয়নি সেই কারণে এই গ্রাউন্ড যাদের চাকরি গেছে তারা মানবিক গ্রাউন্ডে ছাড় পেতে পারে। কারণ স্পষ্ট দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী করা যায় না। সংবিধান সেই অধিকার দিয়েছে বিচারককে এবং দোষীকে। 
 মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার প্রদান করে সংবিধান। খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান এই সমস্ত অধিকার গুলি সংবিধান রক্ষা করে মানুষের জন্য। একজন জেল খাটা খুনির আসামি যদি জেলে বসে কাজ করে সে তার পারিশ্রমিক পায়। আর 
 হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের যে রায় বেরিয়েছিল তাতে যারা দোষী প্রমাণিত হয়েছিল তাদেরকে টাকা ফেরত  দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ১২% সুদসহ। ভারতবর্ষের ইতিহাসে  দোষীকে সুদসহ টাকা ফেরত  দেওয়ার ঘটনা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনায় পরিণত হয়েছে। 
 একজন খুনি আসামি দোষী প্রমাণিত হলে সে নিজে তার কর্মফল ভোগ করবে কিন্ত তার পরিবারের কেউ কেন তার কর্মফল ভোগ করবে ।  এক্ষেত্রে  বিচারকের কলমের খোঁচায় একজন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর পরিবারকে সমাজের চোখে দোষী প্রমাণিত হতে হয়েছে।  তারা প্রতিটা মুহূর্ত সামাজিকভাবে অপমানিত হয়ে চলেছে। যেটা তাদের প্রাপ্য নয়। কিছু উকিল যেভাবে সমাজ মাধ্যমে এই সমস্ত শিক্ষকদের নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে তারাও সমাজের চোখে দোষী বলে ধরা যেতে পারে। কিছু ডিজিটাল মিডিয়ার ভূমিকা ও সন্দেহজনক এই ক্ষেত্রে। কথা বলার মৌলিক অধিকার সংবিধান সকলকে দিয়েছে। কিন্তু যারা টাকা নিল তাদের বিচার এখনো হয়নি কেন এই কথা আদালত কবে শুনবে? আদালতে কেন তাদের বিচার চলছে তাদেরও শাস্তি ঘোষণা করা হোক।
 তর্কের খ্যাতিরে ধরে নেয়া যাক, অশিক্ষক কর্মীরা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে। কিন্তু এদের দ্বারা শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এটা হতে পারে না। বাহ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। জমি বাড়ি বিক্রি করে কিছু মানুষ হয়তো চাকরি পেয়েছে। একটা গ্রাজুয়েট ছেলে  যদি এই টাকা দিয়ে চাকরি পেয়ে থাকে পিওনের তার দায় কি শুধু তার নিজের। এই দায় কোনভাবেই সমাজ এড়িয়ে যেতে পারে না, এড়িয়ে যেতে পারে না এই সরকার। কেন একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট ছেলেকে ঘন্টা বাজানো (পিওন ) চাকরি করার জন্য ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে হবে। দায় যেমন সমাজের আছে তেমনি সরকারের ও আছে। অশিক্ষক কর্মীদের দ্বারা কখনোই 
 শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি হতে পারে না। তার কারণ এরা সরাসরি শিক্ষাদান করে না।
 বিগত ২-৩ মাস এদের শালারি বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকের লোনের ইএমআই, মা বাবার ওষুধের টাকা, ছেলে মেয়েদের স্কুলের মাইনে, সবকিছুই নির্ভর করে এই মাইনের উপর। বিগত আট বছর ধরে এই মাইনরের টাকায় এই সমস্ত কাজ চলছে। যেটা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বন্ধ হয়ে গেছে সকল শিক্ষা কর্মীদের। তারা মানবিক গ্রাউন্ডে কেন নেই। একজন বিচারকের একই রায় দু'রকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে সেখানে সংবিধানকে অবমাননা করা হয়। ২০১৬ সালে চাকরি বাতিল মামলা কখনোই হাইকোর্টের গ্রহণ করা উচিত হয়নি। যে তুই চাকরির প্যানেল এক্সপিয়ার হয়ে গেছিল সেহেতু এই রায় কেন গ্রহণ করা হয়েছিল হাইকোর্টের পক্ষ থেকে এটা আজও ধোসার মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। এই নিয়োগে যে ১৭ রকমের দুর্নীতি হয়েছে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু আইনে এটাও বলা আছে  ১০ জন দুর্নীতিগ্রস্ত লোক ছাড় পেয়ে গেলেও একজনও নির্দোষ ব্যক্তি শাস্তি না পায়। কিন্তু এখানে যেটা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী কাজ। এই সমস্ত চাকরিহারা শিক্ষা কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা যদি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তার দায় কিন্তু শুধুমাত্র সরকারের নয় এইদায় কোর্টের এবং সমাজের ঘাড়ে এসে পড়বে। এদিকে 
 চাকরি বাতিল সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে আবার চাকরির বিজ্ঞপ্তিও বেরিয়ে গেছে। কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয়  যারা এই দুর্নীতির সংগঠিত করল তাদের বিচার এখনো হয়নি। এবং তাদের হাতেই আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায় এসে পড়েছে।
 কিন্তু যতদূর জানা যায় ভারতীয় আইন কখনো কোন বিচারককে  এইভাবে নির্দোষকে দোষী প্রমাণিত করার অধিকার প্রদান করে না। 
 কোটের বিচারক কি রায় দিতে চলেছে সেটা কোর্ট রুমের বাইরে নেতা-মন্ত্রীরা অগ্রিম জেনে যাচ্ছে। 
 সাধারণ মানুষের বিচার ব্যবস্থার প্রতি যদি বিশ্বাস উঠে যায় তাহলে দেশ সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। 
 ২৬ হাজার চাকরি মামলা স্পষ্টভাবে দোষী প্রমাণিত হয়েছে এক্সপায়ার প্যানেল ও রাঙ্ক জাম্প করে যারা চাকরি পেয়েছে তারা।  
 তাহলে বিচারক এদেরকে বাদ দিয়েই সকলকে চাকরিতে পুনঃ বহাল করতে পারতেন সেটাই হতো সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার শ্রেষ্ঠ উপায়। কিন্তুকোর্ট যেটা বুঝেছে সেটাই করেছে।
 ২৬ হাজার চাকরির বাতিল মামলায়  যেভাবে রাজনৈতিক চাপান উতোর চলছে এটা সমাজকে ভালো দিকে নিয়ে যাচ্ছে না। একটা চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর পরিবার কিভাবে চলছে সেটা একজন বিচারক নিজের চোখে দেখলেই বুঝতে পারবে তাদের পরিবারের সদস্যদের কিভাবে দিন চলছে। তারা বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না, সামাজিক অপমানের ভয়ে। কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে পার্টিসিপেন্ড করতে পারছে না পারিবারিক অপমানের ভয়ে। ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে না, অপমানের ভয়ে। ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার অপবাদে তাদের চাকরি চলে গেছে এই অপবাদ সব জায়গায় তাদের শুনতে হচ্ছে।  এটা কি বিচারকরা এবং সরকার উপলব্ধি করতে পেরেছে। ওই শিক্ষকের পরিবারের সকল সদস্যের সুষ্ঠুভাবে সমাজে বসবাস করার মৌলিক অধিকার সংবিধান দিয়েছে। কিন্তু সরকার এবং বিচারকের রায়ের ফলে ওই সমস্ত চাকরি যাওয়া শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী পরিবারের সকল সদস্যের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে আর কয়েক দিনের মধ্যেই 
 এরা প্রত্যেকে এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে নিজে গৃহে আমরন অনশন করার চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে।
 হাতে প্লাকার্ড নিয়ে সকল শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা বাড়ির বাইরে রাস্তার সামনেই তাবু খাটিয়ে  আমরণ অনশন করতে চলেছে। 
 চাকরি হারা শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীদের একটাই দাবি, তারা নতুন করে পরীক্ষায় বসতে রাজি নয়। একমাত্র স্পষ্টভাবে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন যারা তাদেরকে বাদ দিয়ে বাকি সকলকে তার নিজে নিজে কর্মস্থলে ফিরিয়ে দেয়া হোক। আর যারা দোষী প্রমাণিত হয়েছেন তাদের জায়গায় ওয়েটিং প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হোক। তাহলেই সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। OMR ইসু যেহেতু প্রমাণিত নয়। সেই কারনে বেনিফিট অফ দা ডাউট গ্রাউন্ডে এদেরও ছাড় দিয়ে শুধুমাত্র যেটা প্রমাণিত রাঙ্ক জাম্প ও এক্সপায়ার প্যানেলদের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে যোগ্যদের লিস্ট তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে এসএসসি ও সরকারের কাছে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা। এদের জায়গায় ওয়েটিং প্রার্থীদের সুযোগ দেয়া হোক। একটা আশ্চর্যের বিষয় হলো নিজেদেরকে যোগ্য মনে করা শিক্ষক এবং শিক্ষক কর্মীদের মধ্যে অনেকেই তাদের ওএমআর শিট ম্যানুপুলেশনের আওতায় এসে গেছে। 
 এই দাবি নিয়ে হয়তো শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছে চাকরি হারা শিক্ষা ও শিক্ষা কর্মীরা যেতে চলেছে। 



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: