মেমো নম্বরের এই অর্ডারে প্রত্যেক স্কুল ডিসট্রিক্ট ইন্সপেক্টরদের বলা হয়েছে , এই ১৬৯৪ জন গ্রুপ D কর্মীকে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে তাদের নিয়োগ অবৈধ। সেই মর্মের প্রত্যেক ডিসট্রিক্ট স্কুল ইন্সপেক্টররা নোটিশ পাঠিয়ে ১৬৯৪ জনের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন এই মর্মে যে তাদের নিয়োগ অবৈধ । এখন প্রায় পাঁচ বছর অতিক্রমণ করতে চলা গ্রুপ ডি কর্মীরা অথই জলে পড়েছে। চারটি ইনক্রিমেন্ট, একটি পে কমিশন, পাঁচটি বোনাস সহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছেন। এই সমস্ত গ্রুপ ডি কর্মীরা ২৩ তারিখের পর থেকে এখনো পর্যন্ত সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সমাজ থেকে। সংবাদ মাধ্যম তাদেরকে এমনভাবে উত্থাপন করেছে মনে হচ্ছে তারা দেশদ্রোহী। এই সমস্ত কর্মীদের পরিবারকে গত এক সপ্তাহ ধরে যে সামাজিক অপমান অবজ্ঞা সহ্য করতে হচ্ছে তার জন্য কি এরা সত্যিই দায়ী সমাজের কাছে? এই প্রশ্ন করছে বিভিন্ন সমাজকর্মীরা।
বিচারক বলছে এই অবৈধ নিয়োগের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
সমাজ কর্মীদের প্রশ্ন, একজন গ্রুপ ডি কর্মীর কাজ হল স্কুলে গিয়ে ঘণ্টা বাজানো ও প্রধান শিক্ষকের খাতা পত্র এ ঘর থেকে ও ঘরে নিয়ে যাওয়া। এদের কারণে কি করে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এই ১৬৯৪ জনের মধ্যে প্রায় 67 শতাংশ কর্মী আছেন যারা প্রায় সকলেই গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট। বাকিরা সকলে আন্ডার গ্রাজুয়েট। সমাজকর্মীরা সমাজের মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, যেখানে একজন ক্লাস ফাইভ পাস মানুষ স্কুলের অংকের শিক্ষক হচ্ছেন। এদের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে এটা সঠিক। কিন্তু একজন ঘণ্টা বাজানো গ্রুপ ডি কর্মীর দ্বারা কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এটাই প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মীরা বিচারকের উদ্দেশ্যে।
তর্কের খাতিরে ধরে নিয়েই যাক, এই সমস্ত কর্মীরা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন। একজন গ্র্যাজুয়েট পোস্ট গ্রাজুয়েট ছেলেরা ঘন্টা বাজানো চাকরি করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকরি নিচ্ছেন এটা কি সমাজের কাছে ভালো কিছু দৃষ্টান্ত হতে পারে।
অনেকেই আছেন যারা চাকরি পেয়ে বিবাহ করেছেন, বাড়ি করার জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। এখন হঠাৎ করে যদি তাদের চাকরিটা চলে যায় তাদের সামাজিক অবস্থাটা কি হবে সেটা কিন্তু ভাবতে হবে সমাজকে। অনেকেই আছেন চড়া সুদে টাকা নিয়ে চাকরির জন্য ঘুষ দিয়েছেন। কেউবা চাষের জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন দালালকে।
একজন অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাদের যোগ্যতার যাচাই প্রয়োজন আছে অবশ্যই সমাজের কাছে। কিন্তু একদম গ্রাজুয়েট ছেলে ঘন্টা বাজানো চাকরি করছে টাকার বিনিময়ে তাদের দিকটা ভাবতে হবে সমাজকে।
যিনি বা যারা টাকাটা নিয়ে চাকরি দিলেন তারা অন্তরালে থেকে যাচ্ছে আর যারা উচ্চশিক্ষিত হয়েও এই গ্রুপ ডি পিওনের চাকরি করছে টাকার বিনিময় তাদের বিচার হবে ? এটা সমাজকর্মীরা মানতেই চাইছে না।
বিচার সকলের জন্য সমান হওয়া প্রয়োজন।
আগামী ২৪ শে জানুয়ারি যদিও এই কেসের পরবর্তী শুনানি হতে চলেছে। ১৬৯৪ জন প্রার্থী সহ তাদের পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে।
আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু বিচারটা যেন সকলের জন্য সমান হয়। পাঁচ বছর চাকরি করার পর কোন কেউ যদি জানতে পারে তারা চাকরি থাকছে না তার কি মানসিক অবস্থা হতে পারে সেটা জানার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
চাকরি পাওয়ার পরে যারা বিবাহ এবং বাড়ি করেছেন লোন নিয়ে তাদের সামাজিক এবং আর্থিক অবস্থা কি হতে যাচ্ছে একবার ভাবার বিষয় বিচারকের।
সমস্ত নিয়ম মেনেই যখন এদের নিয়োগ হয়েছিল। নিয়মের মধ্যে গাফিলতির দ্বায় কিন্তু এই সমস্ত কর্মীদের নয় দ্বায় সরকারের।
সমাজ কর্মীদের প্রশ্ন, হায়দ্রাবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া যে হার্ডডিস্ক থেকে এই ১৬৯৪ জনের তথ্য পাওয়া গেছে সেটাও কিন্তু সন্দেহের উর্ধ্বে নয়।
একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর বাড়ির ছাদের থেকে যে হার্ডডিস্কটি উদ্ধার হয়েছে তাতেই কিনা নাম পাওয়া গেছিল এই 1694 জনের।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পাঁচ বছর আগের একটি হার্ডডিক্স কি করে ফাঁকা ছাদে সচল অবস্থায় পাওয়া যায়?
আগামী দিনে সত্যিকারের সমাজ কর্মীদের দ্বারা শত শত প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে এই সরকার।
সমাজকর্মীদের বিচার ব্যবস্থার কাছে আবেদন, গত এক সপ্তাহ ধরে ১৬৯৪ যে গ্রুপ ডি কর্মীর পরিবারের সদস্যদের যে অপমান এবং অবজ্ঞা সইতে হচ্ছে সমাজ থেকে সেটার জন্য কি তারা নিজেরাই দ্বায়ী না টোটাল সিস্টেম দ্বায়ী।
পর্ষদ বলছে , এই ১৬৯৪ জনকে তারা রিকমেন্ডেশন লেটার দেয়নি, স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
কিন্তু সমাজকর্মীদের প্রশ্ন , পরীক্ষা দেওয়া, ভাইবা কাগজপত্র ভেরিফিকেশন, স্কুল কাউন্সেলিং এই রিকমেন্ডেশন লেটার পেয়ে স্কুলে জয়েন করলো, পুলিশ ভেরিফিকেশন হলো, পার্মানেন্ট অ্যাপ্রুভাল দেয়া হলো আর এই সবকিছু হয়েছে নিয়ম মেনে !
OMR সিটে নাম্বারের কারচুপি করে এরা নিয়োগ হয়েছে এই অভিযোগ তুলেছে বিচার ব্যবস্থা।
কিন্তু এটা দেখার দায়িত্ব পর্ষদ এবং সরকারের. যদি ১৬৯৪ জন দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তার দায়িত্ব শুধু এই সমস্ত কর্মীদের নয় . এর জন্য পুরোপুরি দায়ী করা হোক সরকার এবং পর্ষদ কে.
যেখানে এই বঙ্গে একজন বিচারক আর একজন বিচারকের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন. বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে আর একজন বিচারক প্রশ্ন তুলছে.
একজন বিচারক তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি দেখছেন. এই নিয়োগ দুর্নীতিতে যারা দোষী তাদেরই কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন. কিন্তু যারা প্রকৃতপক্ষে দায়ী তারা যদি বিচারের আওতায় না আসে তাহলে তো বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে.
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক, হাইকোর্ট চত্বরে ঘুরতে থাকা একজন একজন গ্রুপ ডি কর্মী তিনি বলেন, আমি আন্ডার গ্রাজুয়েট , একদম ছোট্ট বয়সে বাবাকে হারিয়েছি . পরিবারটি আমার উপর নির্ভরশীল. বিগত পাঁচ বছর ধরে আমার এই ছোট্ট আয়ের উৎস হিসাবে আমার চাকরির মাইনা টাই মুখ্য. চাকরি পাওয়ার পরে বিবাহ করেছি দুটো মেয়ে আছে , বাড়িতে অসুস্থ মা আছে. এখন যদি আমার চাকরি চলে যায়. আমি কি করে খাব. ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ছোট্ট একটি বাড়ি করেছি. মাসে মাসে তার কিস্তি দিতে হয় . এখন আমি কি করবো ?
আমার আর চাকরি চলে গেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই আমার.
সমাজকর্মীরা বলছেন, একটি গ্রাজুয়েট আন্ডার গ্রাজুয়েট ছেলে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ঘন্টা বাজানোর চাকরি করছে এটা কি সমাজের কাছে লজ্জার বিষয় নয়. তারপর যদি চাকরি করার পাঁচ বছর পরে সেই সমস্ত কর্মীদের যদি চাকরি চলে যায় সেটা যে আরো ভয়ানক সমাজের কাছে সেটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন. যখন এদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে , তার একটি নির্দিষ্ট সুরাও হওয়া প্রয়োজন. হাইকোর্টের কাছে সমাজকর্মী দের আবেদন যতদিন এই মামলাটি বিচারাধীন থাকবে ততদিন যেন কর্মীদের বেতন বন্ধ না করা হয়.
এই ১৬৯৪ জন কর্মী ও তারপরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আগামী ২৪ তারিখ কি রায় দেবে বিশ্বজিৎ বসু তার দিকেই চেয়ে আছে।.
0 coment rios: