শুভকল্যাণ বিশ্বাস, দৃষ্টি বাংলা, মোথাবাড়ি - ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটে মোথাবাড়িতে শাসক বিরোধী দলের তুলনা করলে দেখা যায়, শাসক দল কয়েক গুণ এগিয়ে থাকবে বিরোধী দলের থেকে। তার কারণ এখানে ৬৭. ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট। যার কারনে এখানে তৃণমূলের জয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
বর্তমানে বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন ২০১১ সাল থেকে এখানে জয়লাভ করে আসছে।
২০১১ এবং ২০১৬ সালে তিনি কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। ২০২১ সালের আগে তৃণমূলে যোগদান করে তিনি তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছেন।
২০১৬ সালে এখানে সাবিনা ইয়াসমিন ৬৯০৮৯ভোট পেয়েছিলেন। যা পোলিং ভোটের ৫২%. আর সিপিএমের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৩০৯১৫ ভোট. বিজেপির শ্যামচাঁদ ঘোষ পেয়েছিলেন ২৭৩০৯ ভোট.
সাবিনা ইয়াসমিন এখানে পরপর তিনবার দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেছেন। আর বিজেপির শ্যামচাঁদ ঘোষ এখানে পরপর তিনবার দাঁড়িয়ে হেরেছেন।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সাবিনা ইয়াসমিন এখানে ৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন পোলিং ভোটের। তিনি মোট ৯৭৩৯৭ ভোট পেয়েছিলেন।
বিজেপির শ্যামচাঁদ ঘোষ পেয়েছিলেন ৪০৮২৪ ভোট। তিনি মোট ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। দুলাল শেখ পেয়েছিলেন ১৬৯০৩ ভোট।
বুধভিত্তিক ২০২১ বিধানসভার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তৃণমূল এই বিধানসভায় ৬৮ শতাংশ বুথে লিড নিয়েছিল। বিজেপি লিড নিয়েছিল ১৭ শতাংশ বুথে। বাকি অন্যান্য বুথ গুলিতে কংগ্রেস সিপিএম লিড নিয়েছিল।
বিজেপি যে সমস্ত জায়গা গুলিতে ভালো ফল করেছিল তার মধ্যে ৮১ নম্বর বুথ থেকে ৯৩ বুথ পর্যন্ত উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামে।
৫নং বুথ থেকে ১৯নং পঞ্চনন্দপুর গ্রামের বুথ গুলিতে। বিজেপির সংগঠন একমাত্র উত্তর লক্ষীপুর এবং পঞ্চানন্দপুর গ্রামে ভালো আছে।
মোথাবাড়ি বিধানসভায় বিজেপি ৫০ শতাংশ বুথ কমিটি সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারেনি।
কিছু কিছু বুথে শুধু বুথ সভাপতি নামেই আছে। সেখানে কোন কমিটি নেই। আলিনগর ও সুলতানগঞ্জ গ্রামের বিজেপি সংগঠন নেই বললেই চলে। এই বিধানসভা ২৭৭ টি বুথের মধ্যে বিজেপির ১০০র কাছাকাছি বুথে কোন সংগঠন নেই। যে টুকু সংগঠন ছিল সেটা নষ্ট হয়ে গেছে পরপর তিনবার শ্যামচাঁদ ঘোষকে প্রার্থী করার কারণে। এখানকার কর্মীদের অভিযোগ, ভোটে দাঁড়ানোর পরে আর খোঁজ পাওয়া যায় না শ্যামচাঁদ ঘোষের। ভোট আসার সময় আগে থেকে তিনি সক্রিয় হয়ে ওঠেন টিকিট নেওয়ার জন্য। এই গুরুতর অভিযোগ করেছে বেশিরভাগ কর্মীরাই।
যদিও এখানে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবুও ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে সঠিক প্রার্থী নির্বাচন করতে পারলে বিজেপি অনেকটা পরাজয়ের মার্জিন কমিয়ে আনতে পারতো। ২০২১ সালে বিজেপি এখানে ৪৬ হাজার ৫৭৩ ভোটে পরাজিত হয়েছিলো।
যদি ২০২১ সালে শ্যামচাঁদ ঘোষকে প্রার্থী না করে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হতো তাহলে হয়তো মার্জিন আরো কমিয়ে আনা যেত।
এখন দেখে নেওয়া যাক আমাদের জনমত সমীক্ষায় যে তথ্য উঠে এসেছে সেটি হলো, যদি ২০২৬ সালে সিপিএম কংগ্রেসের জোট হয় তাহলে এই বিধানসভায় ত্রিমুখী লড়াই দেখার সম্ভাবনা আছে। তবুও তৃণমূলের এখানে জয়ের সম্ভাবনা ৬২ শতাংশ। আমাদের সমীক্ষায় ৮৯৭৯ জন সাধারণ পথ চলতি মানুষ, ২২০ টি অটো চালক, ৩৪০টি টোটো চালক, ১১৮টি দোকানদার এর মতামতের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
শাসক দলের প্রার্থী হওয়া দৌড়ে অবশ্যই সাবিনা ইয়াসমিন এর নাম প্রথমেই থাকবে। তবে আরেকজন জেলা পরিষদ সদস্যার নাম ও শোনা যাচ্ছে। তিনি অভিষেক ঘনিষ্ঠ বলে জানা যায় যাচ্ছে। প্রার্থীর দৌড়ে অবশ্যই সাবিনা ইয়াসমিন সবার প্রথমেই থাকবেন।
বিজেপি প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে প্রথমেই নাম উঠে আসছে সুদীপ সাহার নাম। তিনি রাজ্য তপশিলি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক এবং বিধানসভার অবজারভার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পার্টির সঙ্গে যুক্ত। এই বিধানসভার বেশিরভাগ কর্মীরাই চাইছে তিনি এবার প্রার্থী হন এই বিধানসভা থেকে। ৪৩ শতাংশ কর্মীরা চাইছে তিনি এই বিধানসভা থেকে প্রার্থী হন। শুধু তাই নয় আমাদের জনমত সমীক্ষায় ইংলিশবাজার থেকেও তার নাম প্রার্থীর দৌড়ে আছে। ইংলিশবাজার বিধানসভার কর্মীরা ও তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছে।
এরপরে নাম উঠে আসছে শ্যামচাঁদ ঘোষের। যেহেতু তিনি এখান থেকে ৩ বার প্রার্থী হয়ে এসেছেন। তাই তিনিও প্রার্থীর দৌড়ে আছেন। তবে কর্মীদের পছন্দের প্রার্থী তিনি নন। মাত্র ১৪ শতাংশ কর্মীরা চাইছে তিনি এখান থেকে প্রার্থী হন।
এরপরে নাম উঠে আসছে নন্দন ঘোষ, নিবারণ ঘোষ, ও নবদ্বীপ ঘোষের নামও।
তবে জনমত সমীক্ষায় সব থেকে উপরেই আছে সুদীপ সাহারা নাম।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, এই বিধানসভা যদি ত্রিমুখী লড়াই হয় আর যদি বিজেপি সঠিক প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে তাহলে ফলাফল খুব কাছাকাছি এসে যেতে পারে। তার কারণ সাবিনা ইয়াসমিন এখান থেকে এবার প্রার্থী হলে গ্রুপ বাজি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে তৃণমূলে।